সন্তান প্রতিপালন–১০

একটি শিশুর জন্মের পর থেকেই মস্তিষ্কের ভালোবাসার অংশটির বিকাশ ঘটে। তাই তাকে অনেক অনেক আদর, ভালোবাসা দিতে হবে। যেমনঃ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া, কোলে নিয়ে আদর করা, জড়িয়ে ধরা। এতে মা এবং বাচ্চার মাঝে ভালোবাসার বন্ধন তৈরী হয়। যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে আদর করলে ওরা তাড়াতাড়ি শান্ত হয়। একটা মা যখন সারাদিন বাচ্চাটার সাথে থাকে এবং বাচ্চার জন্য সব কাজগুলো করে তখন এতো এতো সুন্দর স্মৃতির কারনে দুজনের মধ্যে একটা বন্ধন তৈরী হয় এবং বাচ্চার মনের মধ্যে মায়ের প্রতি একটা বিশ্বাস তৈরী হয়। কারন বন্ধন এবং বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য যে স্মৃতি গুলো দরকার সেগুলো বাচ্চাটার মনের মধ্যে থাকে। মায়ের কাছেই একটা বাচ্চা সবচেয়ে বেশী নিরাপদ বোধ করে। প্রতিটা বয়সের একটা চাহিদা আছে। ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত সেগুলো হচ্ছে consistent environment, predicative enviroment, comfort and believe. সে বিশ্বাস করতে চায় যে “The world is safe and predictable”. Consistent environment মানে হচ্ছে একজনের তত্বাবধানে সব সময় থাকা। predictable মানে হচ্ছে আমি জানি একটু পরে কেউ এসে ন্যাপী চেঞ্জ করবে, একটু পরে খেলবো, বিকেলে বাবা এসে আমাকে আদর করবে ইত্যাদি। comfort and believe হচ্ছে আমি জানি কেউ আমাকে মারবেনা, ব্যাথা পেলে কেউ আমাকে রক্ষা করবে ইত্যাদি। এগুলো দিতে পারলে বাচ্চার ভিতরে বিশ্বাস তৈরী হয়। যদি না দেয়া হয় তাহলে অবিশ্বাস তৈরী হয় যেটা সারাজীবন থাকে। এরা স্বামী /স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কারো সাথে বিশ্বাসের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনা। সবসময় হারানোর ভয় থাকে। প্রিয় মানুষ গুলোকে হারাতে চায় না, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।

০ বয়স থেকেই বাচ্চার সাথে বেশী বেশী কথা বলতে হবে। এতে করে সে তাড়াতাড়ি কথা বলা শিখবে এবং মস্তিষ্কের নিউরনের মধ্যে সংযুক্তি ঘটবে। যখন যে কাজগুলো তার সাথে করবো সেগুলো বলতে থাকবো। যেমনঃ তোমাকে এখন খাওয়াবো, গোসল করাবো, ঘুম পারাবো, ন্যাপী পাল্টাবো, বাইরে নিয়ে যাবো ইত্যাদি। কোন জিনিস দেখিয়ে সেটার নাম বলবো। ০-৩ বছরের মধ্যে মস্তিষ্কের ৮৫% নিউরন সংযুক্ত হয়। আমি যখন তাকে এই তথ্য গুলো দিচ্ছি সেটা সাথে সাথেই এই নিউরন গুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছে।

বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য সকাল-সন্ধ্যা আয়াতুল কুরসি ১বার এবং ৩ বার করে সুরা ইখসাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পড়ে নিজের হাতের তালুতে শুকনা থু দিয়ে সারা গায়ে বুলিয়ে দিবো। এছাড়া সুরা বাকারাহ্ তিলাওয়াত করতে/বাজাতে পারি। নিজে যখন কোরআন তিলাওয়াত করবো তখন বাচ্চার সামনেই করতে পারি।

০-২ বয়সের বাচ্চাদের মস্তিস্ক হলো একটা স্পঞ্জের মতো। চারপাশের ভাল/খারাপ সবই শুষে নেয়। তাই আমারা কথা-বার্তা, আচার-আচরণ সব বিষয়ে সতর্ক থাকবো। বাসার পরিবেশ সুন্দর করতে হবে যেমনঃ বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্ক, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি।

বাচ্চাদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এই সময়েই বিকাশ হয়। তাদের সামনে কখনই নিজের কাপড় পাল্টাবো না। তাদের ন্যাপী/কাঁথা পরিবর্তন করার সময় একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে নিবো। লজ্জাশীলতাও এই সময় থেকে শিখাবো। মেয়ে শিশুকে মা অথবা বাড়ীর মহিলারা এগুলো পরিবর্তন করবো এবং গোসল করাবো। বাবাকে দিয়ে এগুলো করাবো না।

https://www.verywellmind.com/erik-eriksons-stages-of-psychosocial-development-2795740

নায়লা নুযহাত