অভিভাবকদের জন্য কিছু জ্ঞাতব্য ও পরামর্শ

এই স্কুলটি, মুসলিম হিসেবে আমাদের ছেলেমেয়েদের গড়ে তোলার চেষ্টায়, “কমিউনিটি সার্ভিস” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সম্পূর্ণ অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে আপনার সন্তানকে কেন দিয়েছেন/দিচ্ছেন তা ভেবে দেখবেন। কেবল পার্থিব প্রাপ্তি নিয়ে ভাবিত হয়ে থাকলে আপনি, সম্ভবত, ভুল ঠিকানায় এসেছেন। আমরা অনুরোধ করবো:  

১) আপনার সন্তানের জন্য নিয়মিত আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন, যেন সে ভালো মুসলিম হিসাবে বড় হয়।

২) আমাদের সাথে আপনার সন্তান ১ কর্মদিবসে, বেশী হলে পাঁচ ঘন্টা সময় থাকে। বাকী সময়টুকু থাকে আপনাদের কাছে এবং আপনাদের পরিবেশ-প্রতিবেশে। সে হিসাবে, “একাডেমিক ক্যালেন্ডার” অনুযায়ী হিসাব করে দেখলে দেখা যাবে একবছরে (যেমন, ২০১৬ সালে) আপনার সন্তান আমাদের সাথে, স্কুলে, তার সময়ের সর্বোচ্চ ১০.৮৪% কাটিয়েছে/কাটাবে – বছরের বাকী ৮৯.১৬% সময় কাটিয়েছে/কাটাবে আপনার পরিবেশে ও প্রতিবেশে। তাই বাড়ীর পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিশুদ্ধ ও সুন্দর না হলে, তাদের চারিত্রিক গঠন নিয়ন্ত্রণ করা পৃথিবীর কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়।

৩) ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে, আমাদের সন্তানদের জীবনে তাদের শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের অবস্থান কি হওয়া উচিত – তা আমরা নিজেরা যেমন শিখবো, তেমনি আমাদের সন্তানদেরও তা শেখাবো ইনশা’আল্লাহ্! আমরা মনে রাখবো যে, জীবনের একটা পর্যায়ে ছেলে-মেয়েদের কাছে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আদর্শ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। এই পর্যায়ে তাদের সামনে তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গীবত, সমালোচনা অথবা তাদের নিয়ে কোন বিরূপ মন্তব্য আমাদের সন্তানদের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা সাহাবীদের, তাবেঈদের এবং ৪ ইমামের জীবনী পড়লে, ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা সম্বন্ধে পর্যাপ্ত ধারণা লাভ করতে পারবো ইনশা’আল্লাহ্!

৪) আপনার ছেলেমেয়েদেরকে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, টেলিভিশন থেকে দূরে রাখুন। তা না হলে তার চরিত্রশুদ্ধিতে কোন ইসলামী তালিমই কাজে আসবে না। আমরা শিশুদের অবোধ বা অবুঝ মনে করলেও, এ যুগের শিশুরা অত্যন্ত প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন, চতুর। আমরা জেনেছি: প্রথম শ্রেণীতে পড়া এমন ছেলে আছে, যাকে তার বাবা-মা ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে দেন এবং আট বছর বয়স্ক এমন ছেলে আছে, যে তার বাবাকে না জানিয়ে ইউটিউব দেখতে বাবার স্মার্টফোনে “ইন্টারনেট ব্যালেন্স” ভরেছে বলে বাবা তার সেই ফোন পরিত্যাগ করেছেন। আপনারা যদি সচেতন না হোন তবে, আপনার সন্তান যে (খবরে প্রকাশিত) ঢাকার স্কুলগামী কিশোর-কিশোরীদের মাঝে পর্ণোগ্রফিতে আসক্ত ৭৭%-এর অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে – তা একপ্রকার নিশ্চিত (নাউযুবিল্লাহ্!)।

৫) সাধারণ ভাবে আপনার সকল সন্তানকেই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাবার অভ্যাস গড়ে তুলতে তাগিদ দেবেন। সেই সাথে, সকালে তারা যেন নাস্তার অন্তত এক ঘন্টা আগে ঘুম থেকে ওঠে এবং বিছানা ছাড়ে সে দিকে খেয়াল করবেন ইনশা’আল্লাহ্! ক্লাসে অমনোযোগী হবার দু’টো প্রধান কারণ হচ্ছে: রাতে দেরী করে ঘুমানো এবং সকালে “পরিপূর্ণ” নাস্তা না করে আসা। আর বিশেষত, আপনার সন্তান যদি বয়োঃসন্ধির কাছাকাছি বয়সের হয়, তবে খেয়াল রাখবেন, সে যেন রাতে বিছানায় শুয়ে জেগে না থাকে; প্রয়োজনে তাকে দিনে ঘুম থেকে বিরত রাখবেন এবং খেলাধূলাসহ শারীরিক পরিশ্রমের ব্যবস্থা করবেন যেন রাতে বিছানায় যাবার সাথে সাথে সে ঘুমিয়ে পড়ে।

৬) ছেলেমেয়েকে যত বেশী সম্ভব সময় দেবেন – তাদের বন্ধু হবার চেষ্টা করবেন। পৃথিবীর প্রতিকূল পরিবেশে কোন অসুন্দর বা অকল্যাণকর ইঙ্গিতের সম্মুখীন হলে, তারা যেন প্রাণ খুলে সবার আগে আপনাকেই সে কথা জানাতে পারে। ১-১২ বছর সময়টা আপনার সন্তানের চরিত্রের ভিত্তি গঠিত হবার সময় – এই সময়টা একবার পার হয়ে গেলে, আপনি তাকে আর শতচেষ্টাতেও হয়তো আপনার কাঙ্খিত নৈতিক ও আদর্শিক পথে পরিচালিত করতে পারবেন না। তখন তার জন্য আপনার সময় হলেও, আপনার কথা শোনার সময়, আগ্রহ বা ধৈর্য তার নাও থাকতে পারে।

৭) আপনার সন্তানের জন্য সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করবেন। আমরা বুঝি, এখনকার নাগরিক ঢাকায় যেখানে তিল ধারণের ঠাঁই নাই, সেখানে এককালের খেলার মাঠগুলো আজ “ইঁটের জঙ্গলে” পরিণত হয়েছে। তবু সময় ও সুযোগ বের করে অন্তত ছেলে সন্তানদের, সপ্তাহান্তে হলেও, বিরল খেলার মাঠগুলোতে বা খোলা জায়গায় নিয়ে যাবেন – কিছু খেলার সরঞ্জাম সাথে নিয়ে। গোটা পরিবার নিয়ে যত ঘন ঘন সম্ভব প্রকৃতির মাঝে, প্রকৃতির কাছে যাবেন ইনশা’আল্লাহ্। মনে রাখবেন: কাদা, মাটি, ঘাস, শিশির ইত্যাদির সংস্পর্শে আমাদের সুস্থতা ও পরিপূর্ণতা রয়েছে জেনেই আল্লাহ্ আমাদের জন্য এই দেশটা নির্ধারণ করেছেন।  

৮) আপনার সন্তানদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নিজে দেখে ও বেছে বেছে তাদের জন্য বই কিনবেন। নবীদের জীবনী, সাহাবীদের জীবনী, ভ্রমণকাহিনী, এডভ্যাঞ্চার ইত্যাদি খুঁজে বের করে কিনবেন – প্রয়োজনে তাদের বই পড়ে শোনাবেন, ইনশা’আল্লাহ্!     

৯) চটুল/হালকা কথাবার্তা বলে থাকেন, এমন “বড়দের” কাছ থেকে সন্তানদের দূরে রাখবেন। অনেক সময়ই নানা/দাদা/নানী/দাদী/দূলাভাই/ভাবী ইত্যাদি সম্পর্কীয় আত্মীয়স্বজন আদি-রসাত্মক ঠাট্টা করে থাকেন। সচেতনভাবে আপনার সন্তানকে এসব থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন ইনশা’আল্লাহ্। এছাড়া আপনার (স্কুলে পড়া বয়সের) সন্তান যেন বহিরাগতদের (বিশেষভাবে বিপরীত লিঙ্গের) কারো কোলে না বসে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন!

১০) আপনার সন্তান যত ছোটই হোক না কেন – আপনার সন্তানকে গৃহপরিচারিকা, ড্রাইভার বা দারোয়ান, এই শ্রেণীর সাহায্যকারীদের প্রযত্নে কিছুতেই একা বা নির্জনে রেখে যাবেন না। গৃহপরিচারিকাদের সাথে আপনার ছোট বাচ্চারা খেলাধূলা করতে পারে, তবে তা আপনাদের চোখের সামনে হতে হবে আড়ালে নয়।

১১) আপনার সন্তানকে আপনার একক পরিবারের বাইরের কারো সাথে কখনোই বিছানা শেয়ার করতে দেবেন না। ১০ বছর বয়স হলে কারো সাথেই বিছানা শেয়ার করা বৈধ নয় – তখন তার জন্য অবশ্যই আলাদা বিছানার ব্যবস্থা করবেন, ইনশা’আল্লাহ্।

মুহাম্মাদ এনামুল হক

কনভেনার, এস.সি.ডি;

চেয়ারম্যান, আই.সি.ডি