সন্তান প্রতিপালন–১১

সন্তান ভুমিষ্টের পর সদ্যোজাত শিশুসন্তানের লালন-পালন করতে গিয়ে একজন মায়ের উপর সীমাহীন শারীরিক ও মানসিক চাপ পরে। হরমোন জনিত কারণে অনেক ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সময় পরিবারের সদস্যদের সহায়ক ভুমিকা পালন করা দরকার। এতে প্রসব-পরবর্তী মানসিক জটিলতা কমে। যেমনঃ সন্তান পালনে নতুন মাকে সাহায্য করা।  মায়ের শরীর ও মন কেমন আছে, তার কোনো সাহায্য দরকার কি না, আন্তরিকভাবে জিজ্ঞাসা করা ও খোঁজ নেওয়া, গৃহস্থালি কাজের (যেমন রান্না, ঘর গোছানো, কাপড় ধোয়া) ভার কমিয়ে নতুন মাকে কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, সমস্যা বেশী মনে হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।

বাচ্চাকে খাওয়ানের জন্য মাকে রাতে অনেকবার জাগতে হয়। তাই ঘুমের অনেক ব্যঘাত ঘটে। দিনের বেলায় বাচ্চা যখনই ঘুমায় মাকেও তখনই ঘুমিয়ে পরতে হবে। বাচ্চা দিনে অনেক বার ঘুমায় তাই এসময়ে মাকে ঘুম এবং প্রয়োজনীয় কাজগুলো সাড়তে হবে।

পরিবারের সদস্যদের কিছু আচরণ মায়ের মানসিক সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে যেমনঃ  সারাক্ষণ শিশু পালনের ব্যাপারে মায়ের ভুল ধরা এবং সমালোচনা করা, অন্য মায়েদের সঙ্গে তুলনা করা, নতুন মা তার মানসিক সমস্যার কথা জানালে সেটা তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি। তাই এ সময়ে মায়ের সাথে সবার আরো সদয় আচরণ কর প্রয়োজন। লক্ষ্য রাখতে হবে যে মানসিক স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে বাচ্চার যত্ন নেয়াও কষ্টকর হয়ে যায়। এতে বাচ্চারও ক্ষতি হয়।

একটি শিশুর যত্ন নিতে গিয়ে মাকে সারাদিন অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। অনেক সময় ভুলেও যায় কি কি কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে মা দৈনন্দিন কাজের একটা লিষ্ট তৈরী করতে পারেন। লিষ্টা হবে সাত দিনের সময় সহ লিখতে হবে। ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যত কাজ করি এমনকি  মাথার চুল আঁচড়ানো, মুখে লোশন দেয়া ইত্যদি সহ। আমরা মায়েরা এই সময় নিজের যত্ন নেয়ার কথাও ভুলে যাই। এতে সুবিধা হলো করণীয়  কাজ গুলো মনে থাকবে। সময় অনুযায়ী সব সময় কাজ শেষ হবে সেটা না কিন্ত এটা নিজের কাজের সুবিধার্থে করা। প্রতিদিন সবগুলো কাজই করতে পারবো সেটাও না। তারপরও নিজের  কাজের গতি থাকে।

বাচ্চা লালন পালনে  জন্য মায়ের শরীরের শক্তি যোগাতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। মাকে যদি সাহায্য করার মত কেউ না থাকে সেক্ষেত্রে  মায়েরা কিছু খাবার আগে থেকে তৈরী  করে রাখতে পারেন যেমন কিছু ডিম একসাথ সিদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। কিছু ফল যা সহজে খাওয়া যায় কিন্তু কাটার ঝামেলা নাই যেমন কলা, আপেল ইত্যাদি। একবারে বেশী করে দুধ জ্বাল দিয়ে  ফ্রীজে রেখে দিতে পারেন যাতে সময় মতো খেয়ে নিতে পারেন।

একটা সন্তান জন্মের পরে মায়ের জীবনের অনেক বড় ধরণের পরিবর্তন হয়। এ পরিবর্তন অনেকে মেনে নিতে পারেন না বা অনেক সময় বুঝতেও পারেন না কি করণীয়।  প্রথমে মাকে এভাবে চিন্তা করতে হবে যে এটাই স্বাভাবিক। এ পরিবর্তনকে গ্রহণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে কষ্টের পরিমানটা কমে যাবে এবং সব কিছু সহজ হবে।

https://kidshealth.org/en/parents/ppd.html

নায়লা নুযহাত