একটা বাচ্চা সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠার জন্য তাকে সব বয়সী মানুষের সাথে মিশতে এবং সময় কাটাতে হবে। এতে করে তার common sense গঠন হবে। এটা কিন্তু বলে শিখানো যায় না। বাচ্চা দেখে শিখে। তাকে মুখে বললে করতে চায় না। পরিবারের একজনের সাথে আরেক জনের আচরণ দেখে সেও শিখে কার সাথে কিরূপ আচরণ করতে হয়। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একটু যারা বয়স্ক তাদের সাথে সময় কাটাতে দিতে হবে যেমন দাদা-দাদী, নানা-নানী, চাচা, মামা, খালা, ফুপু। এতে করে তাদের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, তাড়াতাড়ি কথা বলতে শিখবে এবং ব্যক্তিত্ব গঠন হবে। অনেকে হয়তো বলতে পারেন পরিবারের সবাইতো একই রকম মন মানসিকতা রাখেন না বা সঠিক ভাবে ইসলাম পালন করে না। আমাদেরকে বুঝতে হবে এ দুনিয়ায় সবাই একই রকম মন মানসিকতার নয়। কেউই ভুলত্রুটির উর্ধ্বে নয়। বাচ্চাদেরকেও শিখাতে হবে এমন পরিবেশে সে কিভাবে চলবে এবং ইসলামের রীতিনীতি পালন করবে। যে স্বভাবটা তার মাঝে দেখতে চাই সেটা আমাদের নিজের মধ্যে আনতে হবে এবং করতে হবে। সেটা দেখে সেও শিখবে।
খুব ছোট থেকে তাদেরকে কোরআন, হাদীসের গল্প বলতে হবে এবং পড়ে শোনাতে হবে। এছাড়াও প্রকৃতি, প্রানী, নিজের জীবনের, তার শিশু বয়সের ঘটনা ইত্যাদি নিয়ে তাদের সাথে অনেক গল্প করতে হবে। এতে করে তাদের সাথে একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরী হবে। অনেক বাচ্চারা খাওয়া নিয়ে অনেক ঝামেলা করে। তাদেরকে আমরা এভাবে গল্প বলে বলে খাওয়াতে পারি।
আমাদেরকে বই পড়তে দেখলে সেও শিখবে। নিজেও বই নিয়ে বসবে। তার জন্য বয়স উপযোগী বই দিতে হবে। যত কম ছবি থাকে ততো ভালো। এতে করে তার কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি পাবে। ছবি দেখিয়ে শিখানোর চেয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যেয়ে দেখিয়ে শিখাতে হবে। বাচ্চা যখন অশান্ত, অস্থির অবস্থায় থাকে তখন তাকে বই পড়ে শোনালে সে স্থির হবে। বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় সাথে করে কিছু বই এবং খেলনা নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কোথায় অপেক্ষা করতে হলে যেমন ডাক্তারের চেম্বার অথবা যানবাহনে তাদের হাতে বই বা খেলনা দিলে তারা এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং শান্ত থাকে।
একাডেমিক পড়াশোনা যত দেরিতে শুরু করা যায় ততো ভালো। যেমন ৬ বছর বয়সে ক্লাস ওয়ানে পড়বে। এর আগে তাকে খেলার মাধ্যমে অক্ষর গুলো চেনাতে হবে। কাগজ, পেন্সিল, রং পেন্সিল ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে দাগ দেয়া, শেপ আঁকা ইত্যাদি করতে পারে। এতে করে সে সময় হলে দ্রুত লিখা শিখে যাবে।
অনেকে বাচ্চাকে কোরআন মুখস্থ করাতে চান। শিশু বয়স থেকেই তার সামনে কোরআন তিলাওয়াত ছেড়ে রাখতে হবে অথবা তার সামনে তিলাওয়াত করতে হবে। এতে করে বাচ্চা শুনে শুনে অনেক খানি মুখস্থ করে ফেলবে। সকাল-সন্ধ্যার জিকির গুলোও তার সামনে শব্দ করে করতে হবে যাতে সে শুনে শুনে শিখতে পারে।
একটা বাচ্চাকে ছোট থাকতে তার সাথে এগুলো না করে যদি ডিভাইস দিয়ে রাখি তাহলে উপরোক্ত উপকার গুলো পাওয়া যায় না। বেশী ডিভাইস দেখলে যে ভালো লাগা এবং আসক্তি তৈরী হয় এতে করে ব্রেইনে এক প্রকার হরমোন খুব বেশী পরিমানে রিলিজ হয়। ফলে ডিভাইসটি তাদের কাছ থেকে সরিয়ে নিলে তারা নেগেটিভ রিয়াকশন দেখায়। অন্য খেলা বা কাজ করতে চায় না, অবসাদ বোধ করে। এছাড়া অন্যান্য ক্ষতিতো আছেই। বড়দের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয়।
নায়লা নুযহাত