সন্তান প্রতিপালন-৭

সন্তানকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাজতে রাখার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে এই দুয়া অবশ্যই করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় বাবাকে এই দোয়াটি পড়তে হবে (পড়ার সময়টি বিভিন্ন দোয়ার বই থেকে জানা যাবে)। 

بِسْمِ اللّٰهِ اَللّٰهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا 

আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদের যা রিযক দিবেন তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন।(বুখারীঃ১৪১)

মায়ের মানসিক কর্মের প্রভাব সন্তানের উপর প্রতিফলিত হয়। আমরা জানি যে মাতৃগর্ভে ৪ মাস বয়স থেকে শিশু শুনতে শুরু করে। তাই এ সময় মাকে শব্দ করে কুরআন তিলাওয়াত করার চেষ্টা করতে হবে অথবা কুরআন তিলাওয়াত শুনতে হবে। দুয়ার পাশাপাশি মা খুব বেশি ইবাদত করবে, নামাজ পড়বে, সৎ কাজ গুলো বেশী করবে, গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখবে এই নিয়তে আল্লাহ্‌ যেন এই সন্তানকেও এই সব সিফাতের অধিকারী করেন ! এই দুয়া ও আমল গুলো সন্তানের অধিকার কিন্তু, গাফলতি করে আমরা তাকে বঞ্চিত করতে পারি না কিন্তু ! গর্ভের সন্তানের সাথে মাঝে মাঝে একা শব্দ করে কথা বলতে হবে। আশেপাশের মানুষেরা কিভাবে একে অপরের সাথ কথা বলে সন্তানের  উপর এটারও একটা প্রভাব পরে। 

অনেক মাকে দেখা যায় এ সময়ে হারাম কাজে লিপ্ত থাকেন যেমনঃ গান-বাজনা শোনা, নাটক-সিনেমা দেখা ইত্যাদি। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং বাসার পরিবেশ এ ধরনের হারাম থেকে মুক্ত রাখতে হবে। আল্লাহ্ এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিমুখ করতে পারে এরূপ বই-পত্র ও ধ্যান-ধারণা থেকে মনকে পূত-পবিত্র রাখতে হবে। কেননা যাবতীয় খারাপ, অশ্লীল চিন্তা-ভাবনা পরিহার করে সৎ চিন্তা ও কুরআন-হাদীস এবং নবীদের জীবনী পঠন ও শ্রবণ গর্ভের সন্তানের সুশীল মানসিকতা গঠনে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। 

সন্তান গর্ভে আসার পর মাকে কিভাবে থাকতে হবে তা আলহামদুলিল্লাহ্‌ বর্তমান শিক্ষিত সমাজের জানা আছে, পুষ্টিকর খাদ্য, বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পরিশ্রম, সুন্দর হাসিখুশি পরিবেশ ইত্যাদি মায়ের জন্য ব্যবস্থা করা এবং আলহামদুলিল্লাহ্‌ এই বিষয়ে সবাই খুব খেয়ালী, তবে কিছু কিছু পরিবারে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়, মায়ের সাথে দূর্ব্যবহার করা হয়, পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয় না বা সংসারের কাজ বেশী করানো হয় ইত্যাদি। মনে রাখবেন এতে যেমন মায়ের কষ্ট তেমনি সন্তানকে তার হক থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সন্তান যার গর্ভে থাকবে তার মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি সন্তানের হক, এই হক আদায়ে পরিবারের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বাবাকে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে তার হারাম আয় থেকে ক্রয় করা খাদ্য অথবা হারাম জাতীয় খাদ্য যেন সন্তানের মায়ের পেটে না যায়,

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সুরাহ বাক্বারার ১৭২ নং আয়াতে বলেছেনঃ

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كُلُوا۟ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقْنَٰكُمْ وَٱشْكُرُوا۟ لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ

হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুজী দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার কর এবং আল্লাহ্‌র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা শুধু তাঁরই উপাসনা করে থাকো।

আজকাল গর্ভকালীন মায়ের শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়। এগুলো মা-বাবা এবং পরিবারের অনান্য সদস্যদেরও জানতে হবে। যেমন গর্ভকালীন সময়ে মায়ের মেজাজ খারাপ থাকা, কারো সাথে কথা বলতে ভাল না লাগা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। এগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় না। এছাড়াও অনেক সময় বাচ্চার গঠনগত সমস্যা অথবা অন্য কারণে গর্ভপাত হতে পারে। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা না থাকার কারণে এবং বিভিন্ন কুসংস্কারের কারণে সবাই মাকেই দোষারোপ করে থাকে। 

সন্তানকে সুষ্ঠু ও সুন্দর মনের একজন আদর্শবান মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার প্রধান দায়িত্ব মায়ের। মায়ের মন-মানসিকতার উপর নির্ভর করে সন্তানের মন-মানসিকতা। মায়ের এ ধরনের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য মা ও সন্তানের পার্থিব কল্যাণ নিহিত রয়েছে এবং পরকালে মায়ের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান।

নায়লা নুযহাত