সংসারের শান্তি বজায় রাখার জন্য বাবা-মা দুজনকেই ভূমিকা পালন করতে হবে। একে অপরের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে। বাচ্চা লালন-পালনের জন্য যথেষ্ট ধৈর্য্য-সহ্য প্রয়োজন। শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা ভাল না থাকলে বাচ্চাদের সাথে ভাল ব্যবহার করাও সম্ভব হয় না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিপূর্ণ মুমিন ঐ ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে উত্তম চরিত্রবান এবং তার পরিবারের প্রতি দয়াবান”। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৭৪০২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ঐ ব্যক্তি, যে তার পরিবারের কাছে ভালো। আর আমি আমার পরিবারের জন্য তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি”। (ইবন মাজাহ ও হাকেম)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবারের সদস্যদের সাথে দয়া এবং ভালবাসা পূর্ণ আচরণ করতেন। কিন্তু অবৈধ বিষয়ে এবং দ্বীনের দায়িত্বের ব্যাপারে কোন ছাড় দিতেন না। কিভাবে দুনিয়ার জীবন কাটাতে হবে, চলতে হবে সে শিক্ষা দিয়েছেন কিন্তু আসলে তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল তাদেরকে আখেরাতের জন্য তৈরি করা। এভাবে তিনি কিন্তু দু’দিকে ভারসাম্য বজায় রেখেছিলেন। আমাদের বর্তমানে যে সমস্যাটি হয়, সেটি হচ্ছে আমরা ভারসাম্যতা বজায় রাখতে পারি না। দুনিয়ার ব্যাপারে আমরা এতো বেশী করে ফেলি, এত বেশি দুনিয়া নিয়ে চিন্তা করি যে আমরা আখেরাতের প্রতি উদাসীন হয়ে যাই।
আমরা খুব ছোটবেলা থেকে লেখা পড়া, A B C D/অ, আ, ক, খ শিখাতে ব্যস্ত হয়ে পরি। তারা সুন্দর করে ছবি আঁকতে পারছে কিনা, গান শিখলো কিনা এধরনের হারাম বিষয়ে আমরা যতখানি উৎসাহী থাকি, ততটা উৎসাহী থাকি না তাদের আল্লাহ্ র সাথে কানেকশন তৈরী করে দেয়ার ব্যাপারে এবং দ্বীনি শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে। আবার অনেকে এও মন্তব্য করে যে আজকাল এগুলো না করলে কি হয় নাকি? ওরাতো পিছিয়ে যাবে। সন্তান হয়তো ক্লাসে/চাকুরী জীবনে উচ্চ পর্যায় থাকবে কিন্তু সুস্থ মানসিক বিকাশ না হলে এর প্রভাব পরবর্তীতে সামাজিক এবং সাংসারিক জীবনে পরবে। এতে করে একটি অসুস্থ পরিবার গড়ে উঠবে। অসুস্থ পরিবার থেকে অসুস্থ সমাজ, অসুস্থ সমাজ থেকে অসুস্থ রাষ্ট্র এবং অসুস্থ রাষ্ট্র থেকে অসুস্থ বিশ্ব গড়ে উঠবে। এর প্রতিফলন আমরা ইতোমধ্যেই চারিদিকে দেখতে পাচ্ছি।
এছাড়া যারা এখনও প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তাদেরকে নামাজ, হিজাব, শালিন পোষাক পরা ইত্যাদির জন্য উৎসাহ অথবা ট্রেনিং দেয়ার কোন পদক্ষেপই নেই না। তাদের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেই। আর প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে মন্তব্য করি ওর যখন হেদায়াত হবে তখন করবে। আমার বলার দরকার আমি বলি। অনেকেই জানেন না অথবা জানলেও পাত্তা দেননা যে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের না শিখালে এবং প্রাপ্ত বয়স্করা (যাদেরকে শিখানো হয়নি) না করলে দুই ক্ষেত্রে আল্লাহ কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আর যখন বুঝতে পারি তখন উৎসাহ এত বেড়ে যায় যে আমরা সেটা তাদের উপর চাপিয়ে দেই। তারা নিতে পারছে কিনা, তাদের ভাল লাগছে কি না সেটা আমরা খেয়াল করি না। অথচ ভাল না লাগলে মন থেকে নিতে না পারলে পরবর্তীতে তাদের বিপথগামীতার কারন হয়ে যেতে পারে এবং সেটা থেকে তাদের একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে এটা কিন্তু ভেবে দেখিনা। এর প্রতিফলন আমরা চারিদিকে দেখতে পাই। বাসা থেকে হিজাব করে বের হলেও বাইরে গিয়ে হিজাব খুলে ফেলে, ঘরে নামাজ পড়ে কিন্তু বাইরে কোন খবরই থাকেনা ইত্যাদি।
তাহলে এ ভারসাম্যটা রক্ষা করাটা আমাদেরকে শিখতে হবে। দুনিয়ার জীবনকে অবহেলা করা যাবে না এবং এ জীবন থেকে আখেরাতে পাথেয় সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু আখেরাতের যে লক্ষ্য জান্নাত সেটাই হচ্ছে আমাদের সত্যিকারের লক্ষ্য এবং সেটার জন্য যা করনীয় সেটা করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে এ শিক্ষা গুলো শুধু আমার সন্তানদের পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে তা নয়, সেটা আমাদের পরবর্তী বংশধর, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধব সকলের সন্তানদের জন্যও । এভাবেই আমরা তাদেরকে বড় করবো।
ইসলামের ইতিহাস থেকে জানতে পারি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবাগণ, বড় বড় আমলেমগণ উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তাদের মায়েদের সম্পর্কে বলা আছে যে তাদের এই উত্তম চরিত্র এবং বড় আলেম হওয়ার পিছনে মায়েদের অবদান খুবই বেশী। এতো বেশী যে ভাবলে অবাক লাগে কিভাবে তারা এমন সন্তান গড়ে তুলেছেন। আসলে তাদের উদ্দেশ্যই ছিলো আল্লাহ্ র সন্তুষ্টি। আমাদের এগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে। অনেক কিছুই আমরা এগুলো থেকে শিখতে পারি। ২/৪ টা কথা থেকেই এগুলো শিখা যাবেনা। আমাদেরকে এ সম্পর্কে পড়াশোনা করতে হবে, আলেমদের লেকচার শুনতে হবে।
বেশীর ভাগ ঘরে/বাইরে দ্বীনি পরিবেশ থাকেনা। এমন প্রতিকূল পরিবেশে আমাদের সাধ্য মত চেষ্টা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। সন্তানকেও বোঝাতে হবে যে, সেও সবসময় দ্বীনি পরিবেশ পাবেনা, ইসলাম পালন করতে যেয়ে তাকেও অনেক বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে।
নেক সন্তানের জন্য দোয়া
১। হে আমার রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুণ। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (সূরা আলে ইমরান – ৩:৩৮)
২। হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন সঙ্গী ও সন্তানাদি দান করুণ যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন। (সূরা আল-ফুরকান – ২৫:৭৪)
নায়লা নুযহাত