একটি মানব শিশু যে জিনগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে সেগুলোর মধ্যে যে খারাপ দিকটা থাকে সেটা চেষ্টা করলে সংশোধণ করা যায়। যেমন ধরেন একজন মানুষ খুব রাগী/ জেদী। সে যদি এর উপর কোরআন হাদীসের যে দিক নির্দেশনা গুলো আছে সেগুলো অনুসরণ করে তাহলে নিজেকে অনেকটাই সংশোধণ করতে পারবে। সাহাবীদের জীবন থেকে আমরা এ বিষয় গুলো জানতে পারি। আজকাল চারিদিকে যে মানসিক, চারিত্রিক এবং আচার-আচরণের সমস্যা গুলো দেখি এগুলো নিরাময়ের জন্য যে সকল পরামর্শ গুলো দেয়া হয় এগুলো সবই কোরআন এবং হাদীসে রয়েছে। তাই শুরু থেকে একটি শিশুকে যদি সেভাবে গড়ে তুলি তাহলে তার মধ্যে যত সমস্যাই থাকুন না কেন আল্লাহ্ চাইলে সবই সংশোধণ হয়ে যাবে।
সন্তান প্রতিপালন সহ সবকিছুই যেহেতু আমরা ইসলামিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে চিন্তা করবো সেহেতু বাবা-মা হিসেবে আমাদের দ্বীনের উপর দৃঢ় ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। যে চরিত্র বা আচার-আচরন আল্লাহ পছন্দ করেন সেটা আমাদের ভিতর আছে কিনা দেখতে হবে। অবশ্যই আমরা কেউই পারফেক্ট না। আমাদের চরিত্রে অনেক দোষ থাকে। তারপরও বাচ্চার বাবা-মা যখন হবো তখন মনে রাখতে হবে আমাদেরকে দেখে বাচ্চারা অনেক কিছু শিখে যাবে। কখন, কোন সময় শিখে যাবে আমরা নিজেরাও বুঝতে পারবো না। অবশ্যই সত্যিকার মুসলিম হতে হলে আমাদের নিজেদের কে সংশোধণের প্রয়োজন রয়েছে। সেটার চেষ্টা অনবরত চালিয়ে যেতে হবে। এর জন্য আমাদের কোরআন, হাদিস থেকে শিক্ষা গ্রহণ, সহীহ্ ইসলামীক বই পুস্তক পড়া, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী, নবীদের জীবনী, সাহাবাদের জীবনী পড়া, আলেমদের দারস শোনা ইত্যাদি করতে হবে। সাথে সাথে বাচ্চারা যেন সঠিক জিনিসটি আমাদের কাছ থেকে পায় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
আমাদের মূল লক্ষ্য হবে বাচ্চাদের আল্লাহর বান্দা হিসেবে বড় করা। কারন মানুষের জীবনের একটাই উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত করা। তারপর তার ট্রেনিং এর বিষয়টা আসে। আর এই ট্রেনিংটি শুরু করতে হবে আল্লাহ্ যখন আপনার কোলে সন্তান দিয়েছেন তখন থেকেই। একটা বাচ্চা কিন্তু ছোট সময় থেকেই খেয়াল করে তার বাবা মা, তার চার পাশ, তার পাশের মানুষজন সবকিছু। এই খেয়াল করতে করতে বড় হয়। তার চরিত্রটা তখন থেকেই ধীরে ধীরে তৈরী হয়ে যায়। আমরা সবচেয়ে বড় ভুল করি, ভাবি যে একটা বাচ্চা তো বাচ্চাই সে কিছু বুঝবে না, ওকে এতো কিছু বলার কি আছে, একটা জিনিস চাইছে দিয়ে দিলেই হয়, কান্না কাটি করছে যে কোন মূল্যেই কেন কান্নাটা থামাই না- এ গুলো অনেক বড় ভুল। এটার অনেক দীর্ঘ মেয়াদি একটা প্রভাব পরে। তাদের চরিত্র যেমন হওয়া উচিত তেমন না হয়ে অন্য দিকে মোড় নেয়। একটা বাচ্চা কিন্তু অনেক বুদ্ধি রাখে। সে যতটা মানুষের চরিত্র বোঝে অন্য কেউ কিন্তু বোঝে না। ছোট বেলা থেকেই বুঝে যে, কি করলে তার বাবা-মা তাকে যেটা চায় সেটা দিবে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের শিক্ষা দাও যখন তাদের বয়স থাকে সাত। আর যখন তারা দশ বছরে পৌঁছে যাবে তখন তোমারা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাত আদায় না করলে প্রহার করো এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।” (আবু দাউদ)
এখানে এটা না যে আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে মারা। ব্যাপারটা হচ্ছে ৭ বছর হলে আমি তাকে সালাতের ব্যাপার তাগিদ দেবো, আহ্বান করবো এবং শিখাবো। এভাবে ৮/৯/১০ বছর তার ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে। এই অভ্যাসটিই আমাদেরকে করতে বলা হয়েছে। যখন তারা বালেগ হবে তখন আর কষ্ট হবে না। আগে থেকে নির্দেশ না দিলে তারা আর সালাত আদায় করতে চাবে না। এর জন্যই তারা ১০ বছর বয়সে সালাত আদায় না করলে প্রহার করতে বলা হয়েছে। এ প্রহার হচ্ছে শাসন করা। দরকার হলে মৃদু ভাবে মারতে হবে কিন্তু শরীরে যাতে কোন প্রকার দাগ না হয়। কারন তখনও তারা আপনার কথা শুনবে। কিন্তু বয়স ১৪/১৫/১৬ বছর হয়ে গেলে আর শুনতে চাইবে না। এজন্য শুরু থেকেই আপনি কোরআন, হাদিস মেনে চললে যে রেজাল্ট পাবেন না মানলে সেটা পাবেন না। কোরআান হাদিসের এই নির্দেশ গুলো কিন্তু অযথা নয়। এগুলোর ভিতর অনেক হিকমত রয়েছে। তাই ছোট বেলা থেকে যে অভ্যাসটা করবো বড় হলে এর প্রভাবটা রয়ে যায়। কিন্তু বাচ্চা যখন বড় হয়ে যায় সে অনেক কিছুই শুনবে না বা মানবে না। মনে রাখতে হবে এ জন্য আল্লাহর কাছে আমাদেরকে জবাব দিহি করতে হবে।
নায়লা নুযহাত