সন্তান প্রতিপালন -১৯

*বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের আবেগ অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়*

🟠

 ছোট বাচ্চারা কিছু একটা করতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। তখন প্রচন্ড রেগে যায়। তখন তাদেরকে বলবো না যে রেগে যাওয়া যাবে না। খুবই ছোট যারা তাদেরকে অন্যকিছু দিয়ে অথবা তার সাথে বসে কথা বলে মনটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে। আর অন্যদের ক্ষেত্রে কিভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করবে সেটা শিখাতে হবে। কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সেটা চিন্তা করতে শিখাতে হবে। 

🟠

 কেউ যদি ভয় পায় তাকে বলা যাবে না যে ভয় পাওয়া যাবে না।  ভয় পাওয়াটাই  স্বাভাবিক। তার এই অনুভূতিটাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। তারপর এই ভয় থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসবে সে ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে। 

🟠

 বাচ্চা কারো আচরণে মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে তার কথাটা  মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। তাদের কষ্টের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হবে। তার কি করনীয় বা তার কি দোষ ছিলো এটা তখন বলবো না। তাহলে সে মনে করবে আমি অপর পক্ষের হয়ে কথা বলছি।  পরে যখন শান্ত হবে তখন তাকে বুঝিয়ে বলবো। সে কিভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে সেটা তাকেই জিজ্ঞেস করবো। তার কি ভুল ছিলো সেটাও বলবো। প্রয়োজনে আমি তাকে সাহায্য করতে পারি সেটাও বলবো। তার কথাটা বা মতামত যদি বৈধ হয় তবে মূল্যায়ন করবো তাহলে সেও অন্যের মতামতকে মূল্যায়ন করা শিখবে। বয়স সন্ধির সময় সব ধরনের আবেগ অনুভূতি বেশী পরিমানে  থাকে।

এখানে উল্লেখ্য যে,  আমরা বাবা মায়েরা চিন্তা করি যে, আমার সন্তান খারাপ কিছু করতেই পারে না।  আমাদের  এ চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাচ্চারা বেশীর ভাগ সময়ে নিজের দোষ স্বীকার করতে চায় না। নিজে অন্যায় করে অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়। যদি তৃতীয় পক্ষ সাক্ষী না থাকে তবে অনায়াসে নিজে কিছু নষ্ট করে বা অপরাধ করে বকা খাওয়ার ভয়ে দ্বিতীয় পক্ষের উপর দোষ চাপায়। অনেক সময় অপর পক্ষের কথা বা আচরণ বুঝতেও ভুল করে। তাই কারো সম্পর্কে কিছু বললে বা অভিযোগ করলে আমরা সেই ব্যক্তির সাথেও কথা বলবো এবং আসল ঘটনাটি বের করার চেষ্টা করবো। 

🟠

 দু’জন ঝগড়া করলে তাদেরকে প্রথমে শান্ত হতে বলবো। কোন নির্দিষ্ট জিনিস নিয়ে ঝগড়া করলে সেটা তাদের কাছ থেকে নিয়ে নিবো। তারপর শান্ত হলে  একজন আরকেজন কে যখন মেরেছিলো/খারাপ ব্যবহার করেছিলো/ কষ্ট দিয়ে কথা বলেছিলো তখন অপর পক্ষের কেমন লেগে ছিলো, তার সাথে এমন হলে তখন তার কেমন লাগতো, এ কথা গুলো জিজ্ঞেস করবো। তবে এটা ৪ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চারা অনুভব করতে পারে না।  তাই তাদেরকে অন্যের কেমন লেগেছে সে অনুভূতিটি আমরা বলে দিবো। ৪+ বছরের বাচ্চাদের নিজেদের মধ্যে এ অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করাবো। এ চর্চাটা আমাদের বড়দেরও থাকতে হবে। 

🟠

 কোন বাচ্চাকে কিছু করতে নিষেধ করার পরও সেটা করতে যেয়ে ব্যথা পায়/ ক্ষতি হয় তখন সাথে সাথে এ কথা বলবো না  যে আমিতো আগেই বলেছিলাম, আমার কথা না শুনলে এমনই হয়….   ইত্যাদি।  এ সময় বাচ্চার অনুভূতি সর্বোচ্চ পর্যায় থাকে বলে লজিক পার্ট কাজ করে না, বোঝালেও বুঝবে না। তাই যখন শান্ত হবে তখনই বুঝিয়ে বলবো যে, তার আমাদের কথা অমান্য করার কারণেই এমন হয়েছে। কারণ কখন, কোন কারণে, কি সমস্যা হতে পারে, এ ব্যাপারে বাবা মায়ের অভিজ্ঞতা তাদের চেয়েও বেশী। এটা তাদেরকে সুন্দর করে বোঝাতে হবে। 

🟠

 প্রচন্ড কষ্ট পেয়ে কান্না করলে বাচ্চাকে কাঁদতে দিতে হবে। আমাদের দেশে প্রচলিত আছে ছেলেদের কাঁদতে নেই। অথচ আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সন্তানের মৃত্যুে কেঁদেছিলেন। কাঁদলে মন হালকা হয়।  দুঃখ কষ্টের সময় বাচ্চাকে বলতে পারি দুনিয়াটা জান্নাত না, দুনিয়াতে কষ্ট হবে। জান্নাতে যা চাবো তাই পাবো। আমরা জান্নাতের জন্য বাঁচি। 

🟠

 যে সব শিশুরা ছোট থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে শিখে বড় হয়েও তারা যে কোন পরিস্থিতিতে  নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। শুধু আবেগের ক্ষেত্রেই নয়, কোন নেশাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, খারাপ কাজ করা থেকে নিজেকে নিযন্ত্রণ করতে পারে, তার আচার-আচরণ সুন্দর হয়, শেয়ারিং শিখে এবং মিলেমিশে থাকে।  মানসিক  স্বাস্থ্য ভালো থাকার করাণে  শারীরিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। বড় হলে এদের অপরাধের পরিমান কম থাকে। 

আমরা স্বামী/স্ত্রী/সন্তান/আত্মীয় স্বজন/ বাইরের মানুষ একে অপরকে অন্যায় ভাবে কথা/ব্যবহারের মাধ্যমে  যুলুম করে থাকি। সেটা রাগের মাথায় অথবা স্বাভাবিক অবস্থায়ও হতে পারে।  তাই নিজেদের এবং বাচ্চাদের আচরণ সংশোধন করে এবং সঠিক উপায়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে যুলুমকারি হওয়া থেকে রক্ষা করি। কারণ যালেমের বিরুদ্ধে করা মাযলুমের দোয়া আর আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না। যে কোন সম্পর্কে নিজের দ্বারা অন্যের প্রতি যুলুম হওয়ার চেয়ে অন্যের দ্বারা মাযলুম হয়ে থাকা তুলনামূলক নিরাপদ । একে অন্যের হক পরিপূর্ণ আদায় করতে সাধ্যমত চেষ্টা করি । প্রতিটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অপরের উপর জ্ঞাত ও অজ্ঞাত যে কোন অবস্থায় যুলুম করা থেকে যেন আমৃত্যু বিরত থাকার চেষ্টা করি। নিজের ইগো বা অহংকার

বিসর্জন দিয়ে ভুল হলে/অন্যায় করলে ক্ষমা চাওয়ার অভ্যাস করি।

মিনজাব ইবনু হারিস আত তামীমী ও সুয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমান ঈমান থাকবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আর যে ব্যাক্তির অন্তরে এক সরিষার দানা পরিমাণ অহমিকা থাকবে সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” 
(সহীহ মুসলিম ১৬৮)

নায়লা নুযহাত